এক অপরিচিত ব্যক্তি অন্ধকার ফুঁড়ে বেড়িয়ে এসে আমাদের ক্যাম্প-ফায়ারের আলোয় সৃষ্ট আলোকিত বলয়সীমার মাঝে, একটি পাথরের ওপর বসে পড়লেন।
‘আপনারাই এই অঞ্চলের প্রথম অভিযাত্রী নন’, বেশ জোর দিয়ে বলে উঠলেন তিনি।
আমাদের কেউ তাঁর এই কথার আপত্তি তুললেন না, কেননা তিনি নিজেই তাঁর এই উক্তির সত্যতার প্রমাণ। আমাদের দলের কেউ তো তিনি নন, আমরা তাঁবু ফেলার সময় হয়তো ধারে-কাছেই ছিলেন। তাছাড়া, তাঁর দলের লোকজনও নিশ্চয় দূরে কোথাও নয়, একা একা থাকার বা ঘুরে বেড়াবার জায়গা তো এটা না। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাটলস্নেক আর শিংওলা ব্যাঙ ছাড়া আর কোন জীবিত প্রাণী দেখিনি আমরা- আমাদের সাথে থাকা পশুগুলো আর নিজেদের বাদে। অ্যারিজোনার কোনো মরুভূমিতে কারও একার পক্ষে শুধু এসব জীবকে সঙ্গী ভেবে দিন কাটানো সম্ভব না; নিজের পশু, খাবার, অস্ত্র– মোটকথা, পুরোদস্তুর সাজ-সরঞ্জামের দরকার। আর এসবের জন্য দরকার সহকর্মী। তবে বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছিল এটা ভেবে যে এই রূঢ় লোকটির সঙ্গীরাও কেমন ধাঁচের মানুষ হবেন। তাঁর কথার মাঝে চ্যালেঞ্জিংয়ের এমন একটা প্রচ্ছন্ন আভাস ছিলো যে, আমাদের আধ-ডজন ‘জেন্টেলমেন অ্যাডভেঞ্চারার’দের প্রত্যেকে বিশেষভাবে বসার ভঙ্গিতে নিজেদের অস্ত্রের উপর হাত রাখলেন, এমন একটা মেজাজে, যেন অপেক্ষায় আছেন, যেকোনো কিছুর; এখানে, এ মুহূর্তে। অবশ্য সেই অনাহুত এসবে কোনো মনোযোগ দিলেন না; বরং আবার বলতে শুরু করলেন, একই ধীরস্থির, একঘেয়ে স্বরে, যেমন শোনা গিয়েছিল তাঁর প্রথম বাক্যেঃ
‘ত্রিশ বছর আগে, টাকসনের অধিবাসী রেমন গ্যালেগস, উইলিয়াম শ, জর্জ ডব্লিউ. কেন্ট এবং ব্যারি ডেভিস; স্যান্টা ক্যাটালিনা পর্বতমালা পার করে যাত্রা করেন পশ্চিমের দিকে, জায়গাটার গঠন-আকৃতির যেমন মর্জি, সেইমতই। অনুসন্ধান চালাচ্ছিলাম আমরা, আর আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যে আমরা যদি কিছুই না পাই তবে বিগ বেন্ডের কাছাকাছি জায়গায় গিলা নদী পেরিয়ে যাওয়া, যেখানে আমরা একটা মধ্যস্থতায় আসতে পারব। আমাদের আউটফিট ভালোই ছিল, তবে ছিল না কোন নির্দেশনা- শুধু রেমন গ্যালেগস, উইলিয়াম শ, জর্জ ডব্লিউ. কেন্ট, আর সাথে ব্যারি ডেভিস।’
তিনি বারবার নামগুলো বেশ ধীরে আর আলাদা আলাদাভাবে বলতে থাকলেন, যেন চাইছেন নামগুলো তাঁর শ্রোতাদের মনে গেঁথে দিতে। আমাদের প্রত্যেকেরই, যাদের সেই মুহুর্তে মনোযোগ ঐ লোকটির দিকে, উদ্বিগ্নতায় একটু শিথিলতা এলো এটা ভেবে যে তাঁর সম্ভাব্য সঙ্গীরা, যারা আছেন অন্ধকারে কোথাও, কালো প্রাচীরের মতো ঘিরে আছেন আমাদের; এই অযাচিত ইতিহাসবিদের মতোই কোন বৈরিতার কারণ হবেন না। তাঁর যা আচরণ, তাতে তাঁকে শত্রু না ভেবে বরং একজন নিরীহ উন্মাদই ভাবা যায়। আমরা এই অঞ্চলে এতটাও নতুন নই যে, সমতল ভূমির অধিকাংশ নিঃসঙ্গ অধিবাসীদের খামখেয়ালিপনায় বিভিন্ন চরিত্র আর ঘটনাপ্রবাহ তৈরির প্রবণতা যে আছে, এবং এর সাথে মানসিক বিকারগ্রস্থতার কোন পার্থক্য যে নেই; সেটি আমাদের অজানা থাকবে। এখানে একজন মানুষ একটা বৃক্ষের মতো; নিজের জাতিগত আর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যেভাবে সম্মতি দিবে তাকে বড় হওয়ার, সেভাবেই সে বেড়ে উঠবে কোনো বনানীতে; খোলা হাওয়ায়, একাকী, সেও মেনে নেবে তাকে ঘিরে থাকা সব শাসন, সব অত্যাচার। এমনই কিছু ভাবছিলাম আর দেখছিলাম লোকটাকে নিজের টুপির ছায়ার আড়ালে, আরেকটু টেনে নামালাম সেটা, আলো থেকে চোখ বাঁচাতে। কিন্তু এরকম একজন মানুষ, নির্বোধ যে তাতে সন্দেহ নেই; কী-ই বা করছেন তিনি এই মরুভূমির অন্তর্দেশে?
২
এই গল্পটা শুরু করার আগে, আমার ইচ্ছা ছিল লোকটার একটা বর্ণনা দেই, আর সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে, আর খানিকটা উদ্ভটভাবেই, আমি লক্ষ্য করলাম যে, এ ব্যাপারে নূন্যতম ভরসাও রাখতে পারছি না নিজের স্মৃতির ওপর। এবং পরবর্তীতে; লোকটার পোশাক-পরিচ্ছদ, ভাব-ভঙ্গি নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে কারও সাথেই কারোর মতামত মিলল না। এরপর যখন নিজের মনমতো একটা বিবরণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম, ব্যর্থ হলাম তাতেও। যে কেউই যে কোনো একটা গল্প বলতে পারেন; বলার সক্ষমতা তো মানবজাতির স্বাভাবিক সামর্থ্যেরই অন্তর্গত, কিন্তু বর্ণনার প্রতিভা, সে তো বিশেষ দান।
নীরবতার অবসান ঘটালো না কেউই; বলে চললেন ঐ ব্যক্তিঃ
‘তখন এরকম ছিল না এই এলাকাটা, গিলা আর গালফের মাঝে কোন রেঞ্চ ছিলো না সেই সময়। পর্বতগুলোর এখানে-সেখানে ফাটলে ক্কচিৎ পানির যে ঝর্ণা দেখা যেত, তাতে আর ঘাসে আমাদের পশুগুলোকে বেশ ভালোই চালিয়ে নেয়া যাচ্ছিল। তখনো আমাদের কোনো ইন্ডিয়ানের সামনে যে পড়তে হয়নি, তাতে আমাদের ভাগ্যটা ভালোই বলতে হয়। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের অভিযানটার উদ্দেশ্য আর ধন-সম্পদের তল্লাশি রইল না, জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হল একমাত্র লক্ষ্য। ফিরে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না আমাদের, অনেকটা দূরে চলে এসেছিলাম। পেছনে যা কিছুর সম্মুখীন হয়েছি, তার চেয়েও খারাপ অন্তত কিছু সামনে নেই। তো, আমরা এগিয়ে চললাম। অসহ্য গরম আর ইন্ডিয়ানদের এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আমরা চলেছি রাতের অন্ধকারে, আর দিনের আলোয় চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব নিজেদের লুকিয়ে রাখার। শূন্য পিপে আর মাংসের অভাব, দিন পার করেছি ক্ষুধা আর তৃষ্ণায়, এরপর হয়তো কোনো খাঁড়ির নিচে জলের ডোবা বা পানির ফোয়ারা পেয়েছি, তা দিয়ে যা একটু গায়ের জোর আর মানসিক সুস্থতা ফিরে এসেছে। তাতে অন্তত কোনো বুনো জানোয়ার মেরে ক্ষুধা মেটানোর শক্তিটা এসেছে শরীরে, অবশ্য পশুটা নিজেও যদি তা চাইত, তবেই পেরেছি। কখনো হয়তো একটা ভালুক, কখনো বা হরিণ, অথবা একটা নেকড়ে, না হয় বনবিড়াল- ঈশ্বর যখন যা দিয়েছেন, সবই তখন আমাদের আহার্য।
একদিন সকালে পাহাড়ের একটা সারির ধার ধরে এগোচ্ছিলাম আমরা, পার হওয়ার মতো কোন রাস্তার খোঁজে। এমন সময় ঝাঁপিয়ে পড়ল একদল অ্যাপাচি, গিরিখাত থেকে পেছনে লেগেছিল হয়তো আমাদের- এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয় ঐ জায়গাটা। আমাদের তুলনায় তারা যে দলে ভারী, সেটা বুঝতে পেরে কোনো সাবধানতার প্রয়োজন দেখল না তারা। চিৎকার করে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ধেয়ে এলো আমাদের দিকে। লড়তে যাব তাদের সাথে, তা ধারণারও বাইরে। কোনমতে নিজেদের নিস্তেজ জন্তুগুলোকে ছুটিয়ে নিয়ে চললাম ঢালু উপত্যকা ধরে, এরপর জিন থেকে নেমে লুকিয়ে থাকলাম খাড়াইগুলোর একটার ঝাড়ের পেছনে। সব জিনিসপত্র পেছনে ফেলে এসেছি শত্রুর জিম্মায়, কিন্তু রাইফেলগুলো ধরা ছিল নিজেদের হাতে, প্রত্যেকেরই- রেমন গ্যালেগস, উইলিয়াম শ, জর্জ ডব্লিউ. কেন্ট এবং ব্যারি ডেভিস।’
৩
‘সেই একই একদল বুড়ো’, বলে উঠলেন আমাদের দলের এক রসিক। লোকটা পূর্বদেশীয়, সামাজিক রীতি-নীতি, ভদ্রতা নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। আমাদের দলনেতার ইঙ্গিতে চুপ হয়ে রইলেন তিনি, আর গল্প-কথক চালিয়ে গেলেন তাঁর আখ্যানঃ
‘সেই অসভ্যগুলোও নেমে এলো নিচে, কেউ কেউ দৌড়ে গেল যেই উপত্যকা পেরিয়ে এসেছি আমরা, সেদিকে। এরপর ওইদিকে যাওয়া থামিয়ে দিয়ে বাধ্য করল আমাদের আরো উপরের দিকে উঠতে।
দূর্ভাগ্য আমাদের, ঐ ঝাড়টা খুব বেশি বড় ছিল না। তাই আমরা একেবারে খোলা প্রান্তরে চলে এলাম। ডজন-কয়েক বার গুলি ছুঁড়লাম আমরা, প্রত্যুত্তরে অ্যাপাচিগুলো তাড়াহুড়োয় এমনভাবে গুলি করতে শুরু করল, আমাদের কেউ মারা যে পড়েনি, তা শুধু ঈশ্বরের কৃপায়। ঢালের বিশ গজ ওপরে ঝোপের নিচে ছিল কতগুলো খাড়া বাঁধ, সেখানে আমরা দেখতে পেলাম একটা সরু রাস্তা। দৌড়ে সেই জায়গায় পার হয়ে একটা গুহায় এসে ঢুকলাম আমরা, যেকোনো সাধারণ বাড়ির একটি ঘরের সমান সেটি। বেশ নিরাপদ জায়গাই বলা যায় সেটিকে আমাদের জন্য, একটা রাইফেল সাথে থাকা যেকোনো মানুষের পক্ষে এখান থেকে অ্যাপাচিদের পুরো দলকেই জমিতে ঢোকা থেকে ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু ক্ষুধা-পিপাসাকে ঠেকানো তো আর সম্ভব না। সাহস তবুও ছিল আমাদের, কিন্তু আশা; সেটা পুরোপুরিই বিস্মৃত।
সেই ইন্ডিয়ানদের দেখিনি আর আমরা, তবে গিরিখাতে তাদের আগুনের জ্বলন্ত দৃষ্টিই বলে দিচ্ছিল, রাত-দিন সশস্ত্র অবস্থায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তারা। আমরা যদি কোনো ধরণের অ্যাকশনে যাই, তবে তিন কদমও ফেলতে পারবে না আমাদের কেউ। পরপর তিন দিন পালাক্রমে নজর রাখলাম, সহ্য করে গেলাম, যতক্ষণ না যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে ওঠে। তারপর– চতুর্থ দিন, সকালে— রেমন গ্যালেগস বলে উঠলেনঃ
“সিনোর, আমি মঙ্গল-দেবতার ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না, এও জানি না তিনি কিসে সন্তুষ্ট হন। ধর্মচারণ ছাড়াই বেড়ে উঠেছি আমি, আপনাদের সাথে খুব বেশি আলাপ হলো না। ক্ষমা করবেন আমাকে, যদি আঘাত দিয়ে থাকি আপনাদের, তবে আমার জন্য, সময় হয়ে এসেছে এই অ্যাপাচি-খেলাকে বিদায় জানাবার।”
নতজানু হয়ে বসে পড়লেন তিনি গুহার পাথরের মেঝেতে, “মাদার অব গড”, পিস্তলটা কপালে ঠেকিয়ে বলে উঠলেন, “রেমন গ্যালেগস আসছে।”’
৪
এবং, চলে গেলেন আমাদের রেখে– উইলিয়াম শ, জর্জ ডব্লিউ. কেন্ট এবং ব্যারি ডেভিস।
দলের অধিনায়ক আমি, তাই এমন মুহুর্তে আমারই কিছু বলা উচিৎ।
“হি ওয়াস আ ব্রেভ ম্যান”, আমি বললাম, “তিনি জানতেন, কখন বরণ করে নিতে হয় মৃত্যুকে, এবং কিভাবে। তৃষ্ণায় পাগল হয়ে যাওয়া, কঙ্কালসার হয়ে বেঁচে থাকা, অথবা অ্যাপাচিদের হাতে মারা পড়া– এ সবই বোকামি ছাড়া কিছু নয়। লেট আস জয়েন রেমন গ্যালেগস।”
একমত হলেন উইলিয়াম শ এবং জর্জ ডব্লিউ. কেন্ট।
আমি রেমন গ্যালেগসের হাত-পাগুলো সোজা করে রেখে একটা রুমাল দিয়ে ঢেকে দিলাম তাঁর মুখ। উইলিয়াম শ বললেন, “আমাকে যেন এরকমই দেখায়- প্রায় এমনই।”
জর্জ ডব্লিউ. কেন্টেরও একই মত।
“সেটাই হবে”, কথা দিলাম তাঁদের, “এই রেড ডেভিলগুলো এক সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করবে বাইরে; উইলিয়াম শ এবং জর্জ ডব্লিউ. কেন্ট, কাছে আসুন, এসে হাঁটু গেড়ে বসুন।”
তাই করলেন তাঁরা, আমি তাঁদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
“সর্বশক্তিমান প্রভু, আমাদের পিতা”, বললাম আমি।
“সর্বশক্তিমান প্রভু, আমাদের পিতা”, উইলিয়াম শ এবং জর্জ ডব্লিউ. কেন্টও সমস্বরে বলে গেলেন।
“ক্ষমা করো আমাদের অধর্মকে”, আমি বলে চললাম।
“ক্ষমা করো আমাদের অধর্মকে”, কন্ঠ মেলালেন তাঁরাও।
“এবং গ্রহণ করো আমাদের স্বত্বাকে।”
“এবং গ্রহণ করো আমাদের স্বত্বাকে।”
“আমেন!”
“আমেন!”
রেমন গ্যালেগসের পাশেই তাঁদের শুইয়ে দিলাম আমি, ঢেকে দিলাম তাঁদের মুখ।’
ক্যাম্প-ফায়ারের উল্টোদিকে খুব দ্রুত কিছু একটা নড়ে উঠল হয়তো, আমাদের একজন তড়িৎবেগে দাঁড়িয়ে গেলেন পিস্তল হাতে।
৫
‘আর তুমি!’ চিৎকার করে উঠলেন অস্ত্রধারী– ‘পালিয়ে যাওয়ার সাহস হলো তোমার? — বেঁচে থাকতে পারলে তুমি? ইউ কাওয়ার্ডলি হাউন্ড, আমিই পাঠাব তোমাকে তাঁদের কাছে!’
আমাদের ক্যাপ্টেন চিতাবাঘের ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁর উপর, চেপে ধরলেন তাঁর হাত, ‘সামলাও নিজেকে, স্যাম ইয়োন্টসে, নিজেকে সামলাও!’
আমরা প্রত্যেকেই তখন দাঁড়িয়ে গিয়েছি যে যার জায়গায়, শুধু ঐ ব্যক্তি বাদে; রীতিমত অনড়, অন্যমনস্কভাবেই বসে থাকলেন তিনি। কেউ একজন ইয়োন্টসে’র আরেক হাতও ধরে রাখলেন।
এবার আমি বলে উঠলাম, ‘ক্যাপ্টেন, গরমিল আছে কোথাও একটা। এই লোকটা হয় একজন উন্মাদ না হয় মিথ্যেবাদী- একজন নিছক, সাধারণ মিথ্যেবাদী; যাকে খুন করার কোন দরকারই নেই ইয়োন্টসে’র। এই লোকটা যদি সেই দলেরই হতেন তবে সদস্য থাকতো পাঁচজন– যাঁদের একজনের, সম্ভবত তাঁর নিজেরই– নামটা বলেননি এখনো।’
‘সেটাই’, সেই অবাধ্যকে ছেড়ে দিয়ে, কথাটা বললেন ক্যাপ্টেন, ‘কিছু অস্বাভাবিকতা তো আছেই। অনেক আগে এখানে চারজন শ্বেতাঙ্গের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ছাল-চামড়াবিহীন, বিকলাঙ্গ কতগুলো মরদেহ দেখা গেছে গুহার মুখে। ওগুলোকে কবর দেয়া হয় সেখানেই– আমি দেখেছি সমাধিগুলো। কাল সবাই আমরা যেতে পারি সেখানে।’
এমন সময়ে উঠে দাঁড়ালেন আখ্যায়ক, ‘চারজনই ছিলেন সেখানে’, বলে চললেন– ‘রেমন গ্যালেগস, উইলিয়াম শ, জর্জ ডব্লিউ. কেন্ট এবং ব্যারি ডেভিস।’
বিড়বিড় করতে করতে হাঁটা শুরু করলেন, অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন তিনি। এমন সময়, আমাদের দলের যাঁকে পাহারায় রাখা হয়েছিল, ছুটে এলেন আমাদের দিকে।
‘ক্যাপ্টেন’, বলে উঠলেন তিনি, ‘গত আধ-ঘন্টা যাবত ঐ টিলাটার উপরে তিনজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি আমি।’ যেদিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি, সেদিকেই গেছেন আমাদের আগন্তুক। ‘বেশ স্পষ্টভাবেই তাদের দেখতে পেয়েছি চাঁদের আলোয়, কিন্তু কোনো অস্ত্র ছিলো না তাদের কাছে। আর আমিই তাদের কাভার দিতে পারছিলাম। ভেবেছিলাম, হয়তো কোনো মুভমেন্টে যাবে না তারা, আর করেওনি কিছু। বাট ড্যাম ইট! দে হ্যাভ গট অন টু মাই নার্ভস।’
৬
‘ফিরে যাও নিজের পোস্টে, যতক্ষণ না আবার দেখা যায় তাদের, থাকো সেখানে’, আদেশ দিলেন ক্যাপ্টেন। ‘আর বাকি সবাই, শুয়ে পড় এখুনি, নয়তো সবক’টাকে আগুনে ফেলব।’
পাহারাদার চলে গেলেন নিজের জায়গায়। আমরা আমাদের কম্বল বের করছি, এমন সময় ইয়োন্টসে বলে উঠলেন, ‘আই বেগ ইউর পারডন ক্যাপ্টেন, কিন্তু কোন নরাধমকে এখন ধরতে চাচ্ছেন আপনি?’
‘রেমন গ্যালেগস, উইলিয়াম শ, আর জর্জ ডব্লিউ. কেন্ট।’
‘আর ব্যারি ডেভিস? আমি যে চেয়েছিলাম তাকেই খুন করতে।’
‘তার আর দরকার নেই; প্রাণহীনকে নতুন করে নিষ্প্রাণ করতে পারতে না তুমি। শুয়ে পড়।’
—————————————————————-
মাথার উপর দিয়া গেলো 😦
LikeLike
খুব সাধারণ একটা হরর গল্প। তেমন কিছু না।
LikeLike